নদী ভিত্তিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশ - বিবর্ণ রাফি


 বাংলাদেশে নদীই সম্পদ ছিল। নদী থেকে আমরা খাদ্য, জীবিকা থেকে শুরু করে চাইলে প্রায় সবই পেতে পারতাম।

নদী ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারতো। বাট এত বড় সম্পদকে কেউ বুঝতে পারলো না,

কেউ কাজও করলো না! তবে এখনো সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি- 


বাংলাদেশে নদীভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে নদী এখানে শুধু প্রাকৃতিক সম্পদই নয়, একটি শক্তিশালী পরিবহন ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো হিসেবেও কাজ করতে পারে। 


এই সম্ভাবনার কারণ হিসেবে প্রথমেই রয়েছে ভৌগোলিক সুবিধা। পূর্ব, উত্তর, পশ্চিম প্রায় সব দিক দিয়ে নদী প্রবেশ করে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।  সব অঞ্চল জুড়ে নদীর এমন অসাধারণ বিন্যাস আপনি সবদেশে দেখতে পাবেন না। 


1. ভৌগোলিক সুবিধা 

   * বাংলাদেশে প্রায়  কমবেশি ২২,০০০ কিলোমিটার নদীপথ রয়েছে, যার মধ্যে ৬,০০০ কিলোমিটার সারা বছর নৌ-চলাচলের উপযোগী।

   * দেশের ভেতরে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে এটি একটি স্বাভাবিক ও খরচ-সাশ্রয়ী মাধ্যম।


2. অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

   * সড়ক ও রেলপথের তুলনায় নদীপথে পরিবহন খরচ অনেক কম।

   *ভারী পণ্য (কয়লা, সিমেন্ট, ইস্পাত, শস্য, নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদি)  নদীপথে সহজে পরিবহন করা যায়।

   * ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে আঞ্চলিক বাণিজ্যেও নদীপথ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।


3. যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম

   * সড়ক ও রেলপথে চাপ কমাতে নদীপথ একটি বড় বিকল্প হতে পারে।

   * যানজট নিরসন ও জ্বালানি সাশ্রয়ে এটি সহায়ক।


4. কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি

   * নদীপথে কৃষিপণ্য দ্রুত ও সস্তায় শহরে পৌঁছানো যায়।

   * গ্রামীণ অর্থনীতি সক্রিয় হয় এবং স্থানীয় বাজার সম্প্রসারিত হয়।


5. পর্যটন সম্ভাবনা

   * সুন্দরবন, কক্সবাজার, বরিশাল, সিলেট, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদীঘেঁষা এলাকা ঘিরে #রিভার_ট্যুরিজম গড়ে উঠতে পারে।

   * বিলাসবহুল ক্রুজ সার্ভিস দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটনে নতুন দিগন্ত খুলতে পারে।


6. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ট্রানজিট

   * বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান প্রোটোকল রুট আরও উন্নত করলে উভয় দেশের বাণিজ্য বাড়বে।

   * বাংলাদেশ ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।


তবে আমাদের নিজেদের দোষে আমরা এই সম্ভাবনার অনেকটাই নষ্ট করেছি, তাই বেড়েছে চ্যালেঞ্জ-


* নদীর নাব্যতা হ্রাস, ভরাট ও দখল।

* আধুনিক নৌযান, বন্দর ও টার্মিনালের অভাব।

* নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

* সমন্বিত নীতিমালার ঘাটতি।


বাংলাদেশে নদীভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবহন খরচ কমানো, আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করা সম্ভব। এজন্য দরকার নদীর নাব্যতা রক্ষা, আধুনিক নৌবন্দর উন্নয়ন ও সুষ্ঠু নীতি প্রয়োগ।


মোটাদাগে যদি বলি-

☞ প্রথমেই নদী ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ার জন্যে আমাদের পলিসি বানাতে হবে। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। 

☞ ভারতের সাথে যতগুলো আন্ত:সীমান্ত নদী রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। 

☞ নদী শাসন করতে গিয়ে নদী ও জীব বৈচিত্র‍্যের ক্ষতি করার মত দু:সাহস দেখানো যাবে না। 

☞ আমরা এখন জাহাজ রপ্তানি করি! তাই নৌযান চাহিদা নিরূপণ করে উৎপাদন করা লাগবে, গতি ও নিরাপত্তা - দুটাই নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা বা গতি'র একটাও নাই হয়ে গেলে, এই সেক্টর বিকাশ ঘটবে না।

☞ এবং সর্বশেষ, আমাদের নদীর গুরুত্ব পাড়ায় মহল্লায় জনে জনে প্রচার প্রসার করতে হবে, যেন নদী রক্ষায় আর কোন কর্তৃপক্ষকে না লাগে। জনগনই হোক বড় কর্তৃপক্ষ! 


নদী বাঁচান! নদী কাজে লাগান৷ এই সৃষ্টিকর্তা যে সম্পদ দিয়েছেন, সেটা চিনতে হবে অবশ্যই। 


[ছবিটা চলতে চলতে হঠাৎ থমকে ১৯ আগস্ট ২০২৫ এ তোলা]

Post a Comment

Previous Post Next Post