আমেরিকা ভারতের দ্বৈরথ- নেপথ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ - বিবর্ণ রাফি




ইন্ডিয়া আর USA এর সম্পর্ক সবসময়ই কৌশলগত ছিল। 

সেটা ১৯৪৭ থেকেই।


একটা ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থার আশায় NAM নিয়ে কাজ শুরু, তার বছর দশেকের মধ্যেই অবশ্য রাশিয়ার সাথে ভাল সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, এখানে ১৯৭১ সাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


তবে বর্তমানের অবস্থা ভিন্ন, 

এখনকার বিশ্বরাজনীতিও পালটে গেছে অনেকটাই।


ভারত আমেরিকার সাথে কৌশলগত ভাল সম্পর্ক রক্ষা করে, 

আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী- রাশিয়া, চীনের সাথেও এগিয়েছে সমান তালে।

আমেরিকার মিত্র কিংবা ছোট ভাই ইসরায়েল ভারতের বেশ কাছের। 


কিন্তুদু'পক্ষের মধ্যে সমান তালে এতদিন আগালো কীভাবে? 

প্রধান কারণ ভারতের ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক শক্তি।


ভূরাজনৈতিক ভাবে ভারত শক্তিশালী কেন?


১. ভৌগোলিক অবস্থান

দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দু → ভারত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ এবং পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সঙ্গে স্থলসীমা ভাগ করে।


ভারত মহাসাগরে প্রাধান্য → ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রীয় অবস্থান থেকে এটি পারস্য উপসাগর, আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।


সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ নিয়ন্ত্রণ → মালাক্কা প্রণালী, হরমুজ প্রণালী ও সুয়েজ খালের বাণিজ্য রুটে ভারতের নৌবাহিনী দ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।

ইন্ডিয়ার উপর শুল্ক বৃদ্ধির ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কীভাবে  ভূমিকা রাখবে? - পড়তে ক্লিক করুন ] 


---


২. অর্থনৈতিক ক্ষমতা

বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতি (GDP অনুযায়ী)।

বৃহৎ ভোক্তা বাজার → ১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যা ভারতের বাজারকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

প্রযুক্তি ও সেবা খাত → IT, ফার্মাসিউটিক্যালস, মহাকাশ প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী।


৩. সামরিক শক্তি

বিশ্বের ৪র্থ বৃহত্তম সামরিক বাহিনী।

পারমাণবিক ক্ষমতা → ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রাগার ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তি ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ।

নৌবাহিনী ও মহাসাগরীয় নজরদার→ ভারত মহাসাগর এলাকায় নজরদারি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষমতা রাখে।


৪. কূটনৈতিক প্রভাব

গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি→ বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে ভারতের কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

গ্লোবাল গ্রুপে সক্রিয়** → BRICS, G20, QUAD, SCO এবং জাতিসংঘে সক্রিয় ভূমিকা।

আমেরিকা, রাশিয়া ও ইউরোপ—সব দিকের সঙ্গে সম্পর্ক → ভারতের "মাল্টি-অ্যালাইনমেন্ট" কূটনীতি তাকে একটি ভারসাম্য রক্ষাকারী শক্তি বানিয়েছে।


৫. সাংস্কৃতিক ও Soft Power

বলিউড ও সংস্কৃতি → ভারতীয় সিনেমা, সঙ্গীত ও খাবার বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।

প্রবাসী ভারতীয়দের প্রভাব → বিশ্বের বহু দেশে প্রবাসী ভারতীয়রা অর্থনীতি ও রাজনীতিতে ভূমিকা রাখে।


এসব কিছুই ভারত দ্রুত বিশ্বরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় উঠে আসে। এসব বিষয় সামনে রেখেই ভারত পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করে থাকে।



এবার আসা যাক-

দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার চ্যালেঞ্জ কী কী- 

দক্ষিণ এশিয়ায় (South Asia) আমেরিকার জন্য কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা ভূরাজনীতি, নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও কূটনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রধানগুলো হলো—


১. চীন ও রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলা

চীন “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” (BRI) ও বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় (বিশেষত পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল) প্রভাব বাড়াচ্ছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আমেরিকার কৌশলগত ভারসাম্যে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।


২. ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ও কাশ্মীর ইস্যু

দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী বিরোধ দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা কমায়। যুক্তরাষ্ট্রকে ভারসাম্য রাখতে হয়—ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও পাকিস্তানের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা। 

৩. আফগানিস্তান ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যু**

তালেবান শাসনের পর আফগানিস্তানে মানবাধিকার, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি গোষ্ঠীর উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য ঝুঁকি।

এছাড়া পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গি নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকা সমস্যা তৈরি করছে।


৪. গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্ন

বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে গণতন্ত্রের সংকট ও মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবস্থান নিতে হয়, যা মাঝে মাঝে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে।


৫. অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা

ভারত মহাসাগর অঞ্চলে বাণিজ্য রুটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

চীনের নৌ-ঘাঁটি (যেমন শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা) আমেরিকার সামুদ্রিক কৌশলের জন্য চ্যালেঞ্জ।


৬. জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবিক সংকট

দক্ষিণ এশিয়ায় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ইত্যাদি জলবায়ুজনিত দুর্যোগ বেড়ে যাচ্ছে—যা মানবিক সহায়তা ও উন্নয়ন সহায়তার চাপ বাড়ায়।

৭. অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা

দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই সরকারের অস্থিরতা বা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।


দক্ষিণ এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যে মত চ্যালেঞ্জ সম্ভবত আমেরিকাকে মধ্যপ্রাচ্যেও মোকাবিলা করতে হয় না। 

এখানে পাশাপাশি অনেক পারমাণবিক দেশ, একটা দেশ অন্যটার সাথে সীমান্ত শেয়ার করে, যেমন- ভারতের সাথে পাকিস্তান ও চীনের সীমান্ত,  চীন রাশিয়ার, চীন উত্তর কোরিয়া,  উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া সংকট ইত্যাদি।

এর মধ্যে পাকিস্তান ভার‍ত, ভারত চীন একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছে। 

সংঘাত সত্ত্বেও, 

ভারত চীনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারত্ব বজায় রাখে, BRICS জোটেও আছে, আবার চীন বিরোধী জোট কোয়ার্ডেও ভারত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। 

ভার‍ত পাকিস্তান সম্পর্ক খারাপ হলেও তারা SCO সদস্য, এবং ভার‍ত সার্ক সম্মেলন করতে পাকিস্তান না গেলেও, SCO সম্মেলনের জন্যে পাকিস্তান যায়। 


এমন জটিল সমীকরণে এখানে একটা ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে আমেরিকাও জটিলতায় মুখে পরে। 


ভারতের শক্তি ও আমেরিকার চ্যালেঞ্জ এবং চীন রাশিয়ার উত্থানকে কাজে লাগিয়ে ভারত একটা ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পেরেছিল।


[ ইন্ডিয়ার উপর শুল্ক বৃদ্ধির ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কীভাবে  ভূমিকা রাখবে? - পড়তে ক্লিক করুন ] 



ভারতের ভারসাম্যের রাজনীতি: 

ভারত দীর্ঘদিন ধরে “কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন” নীতি অনুসরণ করে—মানে কোনো এক পক্ষের সঙ্গে সম্পূর্ণ জোটে না গিয়ে, সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে নিজের জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এভাবে ভারত আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। বিষয়টি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করলে—

১. আমেরিকার সাথে সম্পর্কঅর্থনীতি ও নিরাপত্তা

  • ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা জোট (Quad)-এ যোগ দিয়ে চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল সমর্থন করে।

  • উচ্চ প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা (যেমন C-17, Apache হেলিকপ্টার) এবং IT খাতে আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

  • বিশাল মার্কেট হিসেবে আমেরিকান বিনিয়োগ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

  • কিন্তু চীনের সঙ্গে সংঘাত হলেও, ভারত কখনও সরাসরি আমেরিকার সামরিক ব্লকে যোগ দেয় না।

২. রাশিয়ার সাথে সম্পর্কপ্রতিরক্ষা ও জ্বালানি

  • ভারতের ৬০–৭০% সামরিক সরঞ্জাম রাশিয়া থেকে এসেছে (যেমন S-400 মিসাইল সিস্টেম, T-90 ট্যাঙ্ক)।

  • সস্তায় তেল ও গ্যাস আমদানি করে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের পর।

  • রাশিয়ার সাথে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক মিত্রতা রয়েছে—শীতল যুদ্ধকাল থেকেই।

  • তবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সতর্কভাবে পদক্ষেপ নেয়।

 ৩. চীনের সাথে সম্পর্কসংঘাত ও বাণিজ্য

  • সীমান্তে (LAC) সংঘর্ষ ও আস্থাহীনতা থাকলেও চীন ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারদের একটি।

  • প্রযুক্তি ও উৎপাদন সরবরাহ চেইনে চীনের ওপর আংশিক নির্ভরশীল।

  • BRICS ও Shanghai Cooperation Organisation (SCO)-এ চীনের সঙ্গে কাজ করে, তবে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রাখে।


৪. ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল

  1. Multi-alignment — একসঙ্গে একাধিক শক্তিধর দেশের সঙ্গে সম্পর্ক।

  2. Issue-based partnerships — প্রতিটি ইস্যু অনুযায়ী ভিন্ন দেশকে বেছে নেওয়া (যেমন প্রযুক্তিতে আমেরিকা, তেলে রাশিয়া)।

  3. Non-alignment 2.0 — পুরনো নিরপেক্ষ নীতির আধুনিক সংস্করণ, যেখানে জোটে না গিয়ে নিজের অবস্থান ঠিক রাখা।

  4. আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে স্বাধীন ভূমিকা — দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বজায় রেখে বাইরে থেকেও শক্তির ভারসাম্য তৈরি করা।

ভারত চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার সঙ্গে কাজ করে, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভর করে, আবার চীনের সঙ্গেও বাণিজ্য করে। এভাবে তিন দিকেই দরজা খোলা রেখে নিজের কৌশলগত স্বাধীনতা বজায় রাখে। 


শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব: 

যদিও ভারত ভারসাম্য রেখেই চলছিল, তবে হিসেব পালটে যায় ট্রাম্পের রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফে। ভারতের উপর ২৫% ট্যাক্স বসানোর পাশাপাশি রাশিয়া থেকে তেল না কিনতে বলে। 

ভারত সে অনুরোধে কান না দেওয়ায় ট্রাম্প আরো ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন। আর ভারত এতে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া জানায়। 






ভারত আমেরিকার সাথে আলোচনায় না গিয়ে রাশিয়া চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে। 


ভারতে রাশিয়ার তেল কেনার কারণে আমেরিকা ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে তার প্রভাব বহু দিকে পড়তে পারে। নিচে এই প্রভাবগুলো এবং ভারতের সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো আলোচনা করা হলো:


ভারতের ওপর প্রভাব

আমেরিকার অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে ভারতের রপ্তানি খাত, বিশেষত পোশাক, গহনা এবং অন্যান্য শিল্প পণ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। এর ফলে:


রপ্তানি ব্যয় বৃদ্ধি: শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় পণ্যের দাম আমেরিকার বাজারে বেড়ে যাবে। এতে আমেরিকার ক্রেতারা ভারতীয় পণ্যের পরিবর্তে অন্যান্য দেশের পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে, যা ভারতের রপ্তানি কমিয়ে দেবে।

আর্থিক ক্ষতি: রপ্তানি কমলে ভারতের রপ্তানি আয় হ্রাস পাবে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে, যে সব শিল্প আমেরিকার বাজারের উপর নির্ভরশীল, সেগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চাকরি হারানো: রপ্তানি-ভিত্তিক শিল্পগুলোতে উৎপাদন কমলে অনেক কর্মী চাকরি হারাতে পারেন, যা বেকারত্বের হার বাড়িয়ে দেবে।

কূটনৈতিক চাপ:  এটি ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে। ভারত তার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারের সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের কারণে একটি জটিল পরিস্থিতিতে পড়বে।



আমেরিকার ওপর প্রভাব

আমেরিকা ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ করলে তারাও কিছু নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হবে:


ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধি: শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম বাড়বে, যার ফলে আমেরিকান ভোক্তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।

শিল্পে ক্ষতি: আমেরিকার কিছু শিল্প, যারা ভারত থেকে কাঁচামাল বা যন্ত্রাংশ আমদানি করে, তাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে।

বাণিজ্যিক অংশীদারত্বে ফাটল: ভারতের মতো একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারকে দূরে ঠেলে দিলে আমেরিকার বৈশ্বিক প্রভাব কিছুটা কমতে পারে, বিশেষ করে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় এটি নেতিবাচক হতে পারে।



ভারতের সম্ভাব্য মোকাবিলা কৌশল

ভারত এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করতে পারে:


পাল্টা শুল্ক আরোপ: ভারতও আমেরিকার নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে। এর ফলে আমেরিকা তাদের নিজ দেশের শিল্প ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাপের মুখে পড়তে পারে।

বিকল্প বাজার অনুসন্ধান: ভারত আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো (ASEAN), এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো অন্যান্য নতুন বাজার খুঁজতে পারে। ইতোমধ্যে ব্রাজিলের সাথে আলোচনা হচ্ছে

কূটনৈতিক আলোচনা: ভারত কূটনৈতিকভাবে আমেরিকার সাথে আলোচনায় বসতে পারে, যাতে এই শুল্ক আরোপের সমস্যা সমাধান করা যায়। তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণ এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরতে পারে।

আন্তর্জাতিক জোটের ব্যবহার: ভারত ব্রিকস (BRICS) বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে এই বিষয়টি উত্থাপন করতে পারে, যাতে আমেরিকার এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়।


সার্বিকভাবে বৈশ্বিক রাজনীতির উপর প্রভাব যা পড়তে পারে-

পাকিস্তানের মত ভারত চাইলেই ভারতকে আমেরিকানদের হাতে তুলে দেওয়া বা বিতর্কিত চুক্তি করতে পারবে না, কারণ মোদি সবসময়ই জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করে এসেছে।  America First এর মত মোদি India First প্রোমোট করতো। 




ইন্ডিয়া মূলত শুধু দক্ষিণ এশিয়া না, পুরো গ্লোবাল সাউথের নেতা হতে চায়। G20 সামিটে মোদিকে ভারত গ্লোবাল সাউথের লিডার বলে ইন্ট্রিডিউস করায়। এটা নিয়ে চীনের সাথে একটা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের সৃষ্টি হয়।

চীন ভারতের প্রতিযোগিতা প্রবল: সীমান্ত সংঘাত, BRI, String of Pearls, IPS, ইসরায়েল ইস্যু সহ সব কিছুতেই মনোমালিন্য রয়েছে। ভারত সবসময়ই আমেরিকা পন্থী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে BRICS, SCO সহ অনেক কিছুতেই একসাথে কাজও করছে। 

পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে ভারত চীন যদি এক হতে পারে, তাহলে পুরো প্যারাডাইম শিফট হয়ে যাবে। কমবে ডলারের আধিপত্য, হয়ত আমরা দ্রুতই ব্রিকস মুদ্রা পাবো। চীন ভারত রাশিয়া এক হলে আফ্রিকাকে কাছে টেনে মধ্যপ্রাচ্য দক্ষিন পূর্ব এশিয়া পুরোটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

যদিও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে হয়ত এত দ্রুত এত বড় পালাবদল হবে না, তবে ট্রাম্পের ভরসা নেই, হয়ত তিনিই পুশ করে একটা স্ট্রং ট্রাই নেশন বন্ড বানিয়ে ব্রিকসকে আসন্ন শতকের নেতা বানিয়েই ছাড়বেন।


তাই,

এই পরিস্থিতি ভারত এবং আমেরিকা উভয়ের জন্যই জটিল। উভয় দেশই একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাই যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে উভয় দেশেরই দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করা উচিত।

ইন্ডিয়ার উপর শুল্ক বৃদ্ধির ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কীভাবে  ভূমিকা রাখবে? - পড়তে ক্লিক করুন ] 


Post a Comment

Previous Post Next Post