সুদের হার মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়ে কম হলে কী হয়? - রাফিউ আহমেদ

 


 

বর্তমানে (নভেম্বর' ২১) বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানতি সুদের হার গড়ে ২-৩% এর কাছাকাছি। আর মুদ্রাস্ফীতির হার ৫.৬।  এখানে দেখা যাচ্ছে আমানতি সুদের হারের চেয়ে মুদ্রাস্ফীতির হার বেশি, কিছু কিছু ব্যাংকের বেলায় পার্থক্য প্রায় দ্বিগুণ! 

  

মানুষ নানান কারণে ব্যাংকে আমানত রাখেন। তারমধ্যে অন্যতম হল ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের জন্যে মূলধন সৃষ্টি এবং জীবনের সঞ্চয় ব্যাংকে রেখে আর্থিক সুবিধা লাভ করা।

 

 




সাধারণত আমানতি সুদের হার মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়ে বেশি হয়। এতে সঞ্চয়কারীর ক্রয়ক্ষমতা বেশি থাকে, অর্থাৎ আর্থিকভাবে লাভবান হয়। লাভবান হওয়ার আশায় মানুষ ব্যাংকে টাকা জমায়। সে টাকা ব্যাংক ঋণ প্রদান করে। উৎপাদকরা লোন নিয়ে দেশে বিনিয়োগ করে, এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, উৎপাদন বৃদ্ধি পায়; যা ধীরে ধীরে 'Economy of Scale' সৃষ্টি করে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। 

 

তবে বর্তমানে দেখা গেছে মুদ্রাস্ফীতির হার সুদে হারের অনেক বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে এডজাস্ট করতে, এখনো ব্যাংক গুলো কার্যকর করতে পারে নি। 

 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমানতি সুদের হার মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়ে কম হলে কী হয়?

 

প্রথমের দেখা যাক,

ধরুন আপনি ১০০ টাকা দিয়ে একটা আম কিনলেন,

আর ১০০ টাকা ব্যাংকে রাখলেন ১ বছরের জন্যে। এক বছর পর আপনি সুদসহ যে টাকা পেলেন সেটা দিয়ে আম কিনতে গিয়ে দেখলেন আপনি অর্ধেক আম পাচ্ছেন!

 

যেহেতু আপনি ব্যাংকে টাকা রাখছেন,

আপনি খুব স্বাভাবিকভাবেই আশা করবেন যে, নির্দিষ্ট সময়ের পর যে টাকা ব্যাংক থেকে পাবেন সেটা দিয়ে বর্তমানের একটা আমের চেয়ে বেশি আম কিনতে পারবেন। যদি আপনার ক্রয় ক্ষমতা কমেই যায়, তাহলে ব্যাংকে টাকা কেন রাখবেন?!

 

এটাই, মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়ে আমানতি সুদের হার কম হলে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে অনুৎসাহিত হবে।

 

সেক্ষেত্রে, মানুষ টাকা কী করবে? 


মানুষ তখন টাকা ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ব্যয় করবে এবং এতে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। ক্রমান্বয়ে দেশের অর্থনীতি আরো অস্থিতিশীল হবে এবং দেশে প্রান্তিক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

 

তাছাড়া মানুষ যদি ব্যাংকে টাকা না রেখে অন্য কোথাও রাখে কিংবা বাসায় মাটির ব্যাংকে টাকা জমানো শুরু করে এবং এটা অভ্যাসে পরিণত হয়, সেক্ষেত্রে Money Multiplicity কমে যাবে যা আদৌতে দেশের অর্থনীতির জন্যে ভাল হয় না।

 

সুদের হার কমে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যারা জীবনের সব সঞ্চয় ব্যাংকে রেখে প্রাপ্ত মুনাফার উপর নির্ভর করেন। তাদের ক্রয়ক্ষমতা আশংকাজনকভাবে কমে যাবে। এটা বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই বিরূপ প্রভাব ফেলবে। 


দেশের অধিকাংশ অংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত। সুদের হারের অনেক বড় একটা প্রভাব তাদের জীবনে রয়েই যায়। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত এই অবস্থা উন্নয়নে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post