স্টারলিংক (Starlink) হলো স্পেসএক্স (SpaceX) কোম্পানির একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা মূলত দূরবর্তী বা ইন্টারনেট-সংযোগহীন এলাকায় উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য তৈরি।
স্টারলিংক কীভাবে কাজ করে
এটি মূলত লো আর্থ অরবিট (LEO)-এ থাকা অসংখ্য ছোট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে। ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি এমন—
-
স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক তৈরি
-
স্পেসএক্স হাজার হাজার ছোট স্যাটেলাইটকে পৃথিবীর ৫৫০ কিমি উচ্চতায় কক্ষপথে পাঠায়।
-
এই স্যাটেলাইটগুলো মিলে একটি নেটওয়ার্ক বা “constellation” গঠন করে।
-
-
ইন্টারনেট সিগন্যাল প্রেরণ
-
ভূমিতে স্থাপিত “গ্রাউন্ড স্টেশন” থেকে স্যাটেলাইটে ইন্টারনেট সিগন্যাল পাঠানো হয়।
-
স্যাটেলাইটগুলো সেই সিগন্যাল অন্যান্য স্যাটেলাইটের সাথে লেজার লিঙ্কে শেয়ার করে।
-
-
ব্যবহারকারীর ডিশ রিসিভার
-
ব্যবহারকারীর কাছে থাকে একটি বিশেষ ডিশ (Starlink Dish) এবং রাউটার।
-
এই ডিশ সরাসরি আকাশে থাকা নিকটতম স্টারলিংক স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রহণ করে এবং ইন্টারনেট সরবরাহ করে।
-
-
লো লেটেন্সি (Low Latency)
-
স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর খুব কাছাকাছি থাকায় (LEO) ডেটা আদানপ্রদানের সময় খুব কম লাগে (প্রায় ২০-৪০ মিলিসেকেন্ড)।
-
ফলে ভিডিও কল, অনলাইন গেমিং ইত্যাদি সহজে
সম্ভব।
-
মূল বৈশিষ্ট্য
| বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
|---|---|
| গতি | ৫০–২৫০ Mbps (পরিস্থিতি অনুযায়ী) |
| লেটেন্সি | ২০–৪০ ms |
| কভারেজ | দূরবর্তী পাহাড়ি, দ্বীপ, মরুভূমি, সমুদ্র এলাকা পর্যন্ত |
| ইনস্টলেশন | একটি ডিশ ও রাউটার |
| ব্যবহার | বাসা-বাড়ি, জাহাজ, বিমান, দূরবর্তী অফিস, দুর্যোগপীড়িত এলাকা |
স্টারলিংক ও সাধারণ ইন্টারনেটের পার্থক্য:
স্টারলিংক আর সাধারণ ইন্টারনেটের (যেমন ফাইবার, ব্রডব্যান্ড, DSL, মোবাইল নেটওয়ার্ক) মধ্যে মূল পার্থক্য হলো সংযোগের মাধ্যম ও ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা।
স্টারলিংক বনাম সাধারণ ইন্টারনেট
| বিষয় | স্টারলিংক | সাধারণ ইন্টারনেট |
|---|---|---|
| সংযোগ পদ্ধতি | স্যাটেলাইট (লো আর্থ অরবিটে থাকা হাজারো ছোট স্যাটেলাইট) | কেবল (ফাইবার অপটিক, কপার), টাওয়ার, বা মোবাইল নেটওয়ার্ক |
| ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্ভরতা | গ্রাউন্ড স্টেশন ও আকাশে স্যাটেলাইট | ভূগর্ভস্থ/ওভারহেড কেবল, টাওয়ার, নেটওয়ার্ক সুইচিং সিস্টেম |
| কভারেজ | পৃথিবীর প্রায় সব জায়গা, এমনকি পাহাড়, দ্বীপ, সমুদ্রেও | শহর ও উন্নত অবকাঠামো থাকা এলাকা |
| গতি | ৫০–২৫০ Mbps (পরিস্থিতি অনুযায়ী) | ফাইবার: ১০০ Mbps–১ Gbps+, DSL: ১–৫০ Mbps, মোবাইল: ১০–৩০০ Mbps |
| লেটেন্সি | ২০–৪০ ms (LEO স্যাটেলাইটের কারণে কম) | ফাইবার: ৫–২০ ms, DSL: ২০–৫০ ms, মোবাইল: ৩০–৭০ ms |
| ইনস্টলেশন খরচ | ডিশ, রাউটার, সাবস্ক্রিপশন — তুলনামূলক বেশি | কেবল সংযোগ বা রাউটার — তুলনামূলক কম |
| বিশেষ সুবিধা | যেখানে কেবল বা টাওয়ার নেই, সেখানেও ইন্টারনেট পাওয়া যায় | শহর ও অবকাঠামোযুক্ত এলাকায় দ্রুত ও স্থিতিশীল সংযোগ |
| চ্যালেঞ্জ | খারাপ আবহাওয়ায় সিগন্যাল দুর্বল হতে পারে, দাম বেশি | কেবল কেটে গেলে বা নেটওয়ার্ক ব্যর্থ হলে সংযোগ বন্ধ |


Post a Comment