ভারতের উপর শুল্ক বৃদ্ধি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ভূমিকা রাখবে কী? - বিবর্ণ রাফি


 

ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ আমেরিকার শর্ট টর্ম গোল এচিভ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 


রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে ট্রাম্পের মিটিং হবে ১৫ আগস্ট। ও দিকে ভারতের অতিরিক্ত শুল্প কার্যকর হবে ২৭ আগস্ট।  অর্থাৎ মিটিংয়ের প্রায় ১২ দিন পর। 


ট্রাম্প যেকোন মূল্যে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাচ্ছেন, এটা স্রেফ নির্বাচনী ওয়াদা পালনের জন্যে না। হতে পারে এটা নোবেল পুরষ্কারের আশায় বা অন্য কারণে।

 

 সাম্প্রতিক সময় আমরা কিছু ব্যাপার লক্ষ করি-

  • বিবাদমান নানান দেশ গোষ্ঠীর মধ্যে বেশিরভাগ শান্তি চুক্তি করেছে চীন। যেমন ইরান সৌদি, হামাস পিএলএ ইত্যাদি। গুড অফিস ডিপ্লেমেসিকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীন যথেষ্ট ক্ষমতায়িত হয়েছে।
  • আমেরিকা ১ম প্রেসিডেন্সি কালে এমন চুক্তির পথে হেঁটে আব্রাহাম একর্ড সাইন করালেও ২য় মেয়াদি নানান দেশে শান্তি স্থাপন করতে বা শান্তি স্থাপনের ক্রেডিট নিতে বেশ আগ্রাসী!  যেমন জোর করে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধের ক্রেডিট নিতে চান, যদিও ভারত তা অস্বীকার করছে। এছাড়া আর্মেনিয়া আজারবাইজান,  ইরান ইসরায়েল ইত্যাদি
  • তবে বিশ্ব দীর্ঘমেয়াদী সংকটে পড়েছে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের জন্যে। এটা এটা বন্ধ করতে পারা একটা বিশাল ব্যাপার হবে। তবে তা নির্ভর করছে চুক্তির শর্ত কী কী তার উপর। চুক্তির আগে ট্রাম্প ইউক্রেনকে চাপ দিয়ে বিরল খনিজ চুক্তি করে ফেলেছেন। অর্থাৎ তিনি যে ব্যবসায়ী তার প্রমাণ রেখেছেন।
  • আমেরিকা ভারতকে চাপে ফেলতে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে, দেড় মাসে পাকিস্তানের সেনা প্রধান দুই বার আমেরিকা সফরে যান। সম্প্রতি ভারত সিন্ধু নদীতে বাঁধ দেওয়ার প্রকল্প নিলে পাকিস্তান ১০টা মিসাইল দিয়ে আক্রমণ করবে বলে জানায়। 










ইন্ডিয়ার তেল কিনা কেন রাশিয়ার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ - 
  • ইন্ডিয়া যুদ্ধের পূর্বে তেল কিনতো প্রায় ০.০২% এর মত, বর্তমানে চাহিদার প্রায় ৩৮%, এত বিশাল পরিমাণ তেল ইন্ডিয়া নিজে ব্যবহার করার পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে বিক্রি করে তেলের দাম কমাতে সাহায্য করেছে এতদিন। তবে এখন আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশ অতিরিক্ত তেল রপ্তানির সক্ষমতা অর্জন করায় আমেরিকা এই চাপ দিচ্ছে।
  • রাশিয়া থেকে সরাসরি কেউ তেল কিনতে পারছে না আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে। তাই রাশিয়া ভারতের মাধ্যমে বিশ্বে তেল রপ্তানি করে প্রচুর টাকা কামাচ্ছে। ভারতও কামাচ্ছে দু'হাতে। 
  • মূলত তেল বিক্রি স্বাভাবিক রাখার কারণেই রাশিয়া যুদ্ধের ব্যয় বহন করতে পারছে, রাশিয়ার মুদ্রার মান শক্ত অবস্থানে আছে।




এখন, ভারতের উপর শুল্ক বৃদ্ধি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কীভাবে ভূমিকা রাখবে- 

  • আমেরিকা যুদ্ধ বন্ধের জন্যে সব বিকল্প ভেবে রেখেছেন ও ব্যবহার করছেন। যেমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া, ইউক্রেনের ভূমি ছাড়তে চাপ দেওয়া সহ অনেক কিছুই। 
  • শেষ অস্ত্র হিসেবে এখন আছে রাশিয়ার তেলের উপর আক্রমণ।  কারণ নিষেধাজ্ঞা বা লং রেঞ্জ মিসাইল কিছু যুদ্ধের গতিপথ পাল্টাতে পারছে না। হাইব্রিড যুদ্ধ কৌশলে এবার তাই অর্থনীতিকে ক্রিপল করতে চাচ্ছে।
  • ভারত ৫০% ট্যারিফ মেনে দীর্ঘদিন ভাল থাকতে পারবে না। মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে, উৎপাদন কমবে, বেকারত্ব বাড়বে। মোদির পুরো সাম্রাজ্যের পতনও হতে পারে। যেমনটা কানাডায় দেখা গেছে। ইতোমধ্যে ভারতে আন্দোলন চলছে ভোট চুরির, রাহুল গান্ধিকে আটক করা হয়েছে। ট্রাম্প এটাকে উস্কে দিয়ে পরিস্থিতি মোদির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।


এছাড়া পুতিনও যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে। তবে তার দাবি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ারই থাকবে। এই দাবিতে কিঞ্চিৎ সায় দিয়েছেন ট্রাম্প। 

তাই আমরা যদি মোটাদাগে দেখি- আমেরিকা যুদ্ধ বন্ধ করতে চাচ্ছে, রাশিয়াও চাচ্ছে, তাই ইন্ডিয়া স্রেফ রাশিয়াকে পুশ করবে শান্তি চুক্তি করার জন্যে।

এতে সবার লাভ, ইউক্রেনের ছাড়া। ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার চাপ দিচ্ছে ইউরোপ। তবে ইউরোপের উপর শুল্কের ভয় দেখিয়ে ট্রাম্প তা মোকাবিলা করে ফেলবেন। 

শীঘ্রই হয়ত আমরা একটা শান্তি চুক্তি অএতে যাচ্ছি, সম্ভবত ২৭ আগস্টের আগে বা কাছাকাছি সময়ে।

তবে,
শর্ট টার্মে হয়ত ট্রাম্প ফায়দা নিচ্ছে ভারতে চাপে রেখে, দীর্ঘমেয়াদে তা সংকট বাড়াবে। 
  • ইন্ডিয়া আমেরিকাকে ভরসা করতে পারবে না। তাই কোয়ার্ড, IPS সব নানান ইস্যুতে ভারত আবার ভাববে।
  • রাশিয়া জিতলেই চুক্তি হবে। এর ফলে পুতিন আরো আত্মবিশ্বাসী হবে, ইউরোপ নিরাপত্তাহীনতায় ভূগবে। বাড়বে অস্ত্রপ্রতিযোগিতা। 
  • ইউক্রেনের একটা বড় ক্ষতি হবে। সরকার পতন হবে, জেলনেস্কির বিরুদ্ধে ইউক্রেনে মামলা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। 

এখন ইরানে বোমা ফেলে শান্তি নিশ্চিত করার যে অদ্ভুত পদ্ধতি ট্রাম্প বেছে নিয়েছেন, জেলনেস্কিকে জোরকে শান্তি চুক্তি হয়ত গিলিয়ে ফেলতে পারবেন, কিন্তু তার বিশ্বকে কতখানি শান্তিতে রাখবে সেটাই ভাবনার বিষয়।

আর এতসব কিছু যদি হয় স্রেফ নোবেল প্রাপ্তির আশায়, তাহলে ব্যাপারটা চুড়ান্ত লেভেলের ছেলেমানুষী। তাহলে হয়ত দেখা যাবে নোবেল না পেলে ট্রাম্প নোবেল কমিটির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসেছেন! 

অদ্ভুত এক উটের পিঠে চড়ছে বিশ্ব রাজনীতি!  

1 Comments

  1. খুব ইনফরমেটিভ লেখা ভাই।
    পাকিস্তান এখন যা করতেছে তা সব আমেরিকার পরামর্শে করতেছে তা সুস্পষ্ট। যদি ধরে নিই,রাশিয়াকে চাপে ফেলতে ভারতের ওপরে এই ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছে তবুও তারা তেল কেনা অফ করবে বলে মনে হচ্ছে না।চীনের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা আমেরিকার সাথে, চীন চাইবে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে।তারা যদি ব্রিকস নিয়ে আগায় তবে আল্টেমিটেলি ডলার চাপে পড়বে।যদিও সেই সুযোগ আমেরিকা দিবে না।ট্রা*ম্প চায় শেষ টার্মে একটা নোবেল তার ঝুড়িতে থাকুক।তাই সে যত পাগলামি আছে সব করতে পারে,এবং বৈশ্বিক মন্দাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।আসলে ট্রাম্প পুরোপুরি ব্যবসায়ী,আমার কাছে পলিটেশিয়ান মনে হয় না!

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post