ডাম্পিং প্রাইস ও রুঢ বাস্তবতা - রাফিউ আহমেদ

dumping-pricing-biborno-rafi


ডাম্পিং প্রাইস ও রুঢ বাস্তবতা।

-

ধরুন আপনি জীবনের সব সঞ্চয় ও লোন নিয়ে কার্পেটের ব্যবসা শুরু করেছেন। এই এলাকায় আপনিই একা কার্পেটের ব্যবসা করছেন। অনেক জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে করলেন যাতে ব্যবসার প্রসার হয়।
আপনার ব্যবসায় লাভ দেখে আরেকজনও কার্পেটের ব্যবসা শুরু করলো। তিনি অবশ্য প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী,  এটা বাদেও আরো ৪ টা লাভজনক ব্যবসা আছে।

আপনি প্রতি কার্পেট বিক্রি করছেন ১৫ টাকা দিয়ে, উৎপাদন খরচ সহ টোটাল খরচ ১২ টাকা। অর্থাৎ তিন টাকা লাভ।

অন্য ব্যবসায়ীর উৎপাদন খরচ সহ টোটাল খরচ ১৩ টাকা। তিনিও বিক্রি করেন ১৫ টাকা দিয়ে।

অন্য ব্যবসায়ী, দেখলো আপনার কার্পেট মার্কেটে আগে এসেছে। তাই বিক্রি বেশি।
সেজন্যে উনি কার্পেটের দাম কমিয়ে ৮ টাকা করে ফেললেন! অর্থাৎ প্রতি কার্পেটের দাম ৭ টাকা কমিয়ে ফেললেন! এবং বিক্রয়মূল্য খরচের চেয়ে ৬ টাকা কম! অর্থাৎ একটা কার্পেট বিক্রি করলে উনার ৫ টাকা ক্ষতি হচ্ছে লাভ হিসেবে না আনলেও!
তাও তিনি ৮ টাকায় বিক্রি শুরু করলেন!

এখন সব ক্রেতা প্রায় অর্ধেক দামে পেয়ে উনার থেকে কিনা শুরু করলো! আপনার ১৫ টাকা দামের কার্পেট কেউ কিনবে না!

কিন্তু আপনার নিজের টাকা লাগবে, লোনের সুদ দেয়া লাগবে, কর্মচারীকে বেতন, কারেন্ট বিল ইত্যাদি তো দেয়া লাগবে! তাই আপনিও বাধ্য হয়ে ৮ টাকায় বিক্রি শুরু করলেন!

এখন দুজনের দাম এক হওয়াতে, এবং আপনার কার্পেটের মান ভাল তাই সব ক্রেতা আপনার কাছে আসবে! আপনার বিক্রি বাড়বে! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিক্রি বাড়া মানে আপনার লস বাড়া! কারণ আপনার উৎপাদন খরচ ১২ টাকা! অর্থাৎ একটা কার্পেট ৮ টাকায় বিক্রি হলে আপনার ৪ টাকা লস!

আর অন্য বিক্রেতার বিক্রি কমা মানে লস কম হওয়া!

এখন আপনি লসে বিক্রি করতে করতে এক সময় দেউলিয়া হয়ে যাবেন! আপনার ব্যবসা বন্ধ করতে হবে! কারণ আপনার জীবনের সব সঞ্চয় আর বাকি নেই, ওদিকে লোন ফেরত দিতে হবে!

আর অন্য বিক্রেতার সমস্যা নাই! কারণ উনার আরো ৪ টা লাভজনক ব্যবসা আছে! একটা ব্যবসার লস উনার কাছে কোন ব্যাপার না!

আপনি দেউলিয়া হয়ে ব্যবসা বন্ধ করলেই,
উনি সে এলাকার একমাত্র কার্পেট বিক্রেতা হয়ে গেলেন! এবার তিনি যেহেতু একা, কার্পেটের দাম বাড়িয়ে ২০ টাকা করে দিলেন!
অর্থাৎ আগের দাম ১৫ টাকার চেয়ে ৫ টাকা বেশি! অর্থাৎ এখন উনার প্রতি কার্পেটের লাভ আগের লাভের ৫ টাকা বেশি! মানে হলো এত দিনের লস উনি খুব কম সময়েই পুষিয়ে নিতে পারবেন!

এটাই হলো ডাম্পিং প্রাইসের মূল কথা!

এটা বিশ্বে অহরহ হয়! বাংলাদেশেও হচ্ছে!

কয়েকমাস আগে রিজেন্ট এয়ারলাইন্স এই কাজটাই করে! তারা ডমেস্টিক ফ্লাইটের দাম এত কমিয়ে ফেলে যে অন্য এয়ারলাইনসের বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়! এরপর তারা বাধ্য হয়ে দাম কমায়! কিন্তু অন্য এয়ারলাইনস গুলো এই ক্ষতি সামলাতে পারেনি কারণ রিজেন্টের মত টাকা তাদের নেই! বাধ্য হয়ে সব এয়ারলাইনস রিজেন্টের সাথে মিটিং করে একটা নেগোসিয়েশনে বাধ্য হয়!

এবং,
এই দুমাস আগেই এমন ডাম্পিং প্রাইসের কবলে পরে আমাদের টেলি অপারেটর গুলো! একটা অপারেটর ইন্টারনেটের দাম এত কমিয়ে ফেলে যে অন্য গুলো ঝামেলায় পরে যায়!

তাই যারা জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে বড় ব্যবসা শুরুর কথা ভাবছেন, তারা এটা ভাল করে বুঝে তারপর নামবেন!

ধন্যবাদ।

Post a Comment

Previous Post Next Post