পরিবর্তিত সময়ে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক

 



ভারতের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে তা বাস্তবিক ভাবেই নির্ভর করবে ভারতের উপর।


বর্তমানে আমাদের Track 1 ডিপ্লোম্যাসির পাশাপাশি Public Diplomacy নিয়েও ভাবতে হচ্ছে,

কারণ এই অন্তর্বর্তী সরকার মোটামুটি জনগনের সরাসরি চুজেন বলা যায়, নির্বাচনে আসে নাই। তাই জনগন খুব সহজেই স্ট্রেসে ফেলে দিতে পারে। 

এই বাস্তবতায় জনগন কী চায় সেটায় বেশি ফোকাস করতে হবে বর্তমান উপদেষ্টা মন্ডলীকে। 


বর্তমানে বা দীর্ঘ সময় ধরেই এ দেশের বড় একটা অংশ কয়েকটা ইস্যু নিয়ে ভারতের উপর বিরক্ত ছিল। যেমন:


- সীমান্ত হত্যা

- পানি বন্টন চুক্তি

- ট্রাঞ্জিটে আনফেয়ার ডিল

- রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী না হওয়া

- বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ

- বৈশ্বিক সংগঠনে বিরোধিতা ইত্যাদি।


এর পাশাপাশি কট্টর হিন্দুত্ববাদী ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি তো ছিলোই।


তার উপর এখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যিনি ভারতের সাথে সুসম্পর্ক রেখে দেশের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন বলে অনেকেই বিশ্বাস করে, তিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন।


মূলত দালাই লামার জন্যে যেভাবে চীনের সাথে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়, বাংলাদেশের বেলায়ও একই হওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।


এখন ভারত এই পরিবর্তিত সময়কে যদি মেনে না নিয়ে তাদের চরিত্রকে না পালটায়, তবে ভারতের সাথে সম্পর্ক ভাল হওয়ার সুযোগ কম।

আর চীন + আমেরিকা দু'জনেই এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পাশে টানার চেষ্টা করবে। 


কয়েক বছরে আমরা যেমন বাংলাদেশের পক্ষে ভারত ও চীনকে পেয়েছিলাম, এখানে ভার‍ত আউট হয়ে আমেরিকা ঢুকে যেতে পারে। 

দেশ গুলোর মধ্যে নানান সমস্যার পরেও একটা নির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে তাদের একসাথে কাজ করাটাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতিতে Functionalism বলে। আপাত ভাবে এটাকে অবিশ্বাস্য মনে হলে বিশ্ব রাজনীতিতে এটা কমন। 


সে যাক,

মূলত ভারতের যে অবস্থান গত এক মাসে দেখা গেল,

তাতে মনে হয়না ভারত খুবই স্মার্ট বিহেভিয়ার করছে,

বরং তারা বাংলাদেশকে এখনো একটা স্যাটেলাইট স্টেট হিসেবে চাচ্ছে। এখানে ২টা ইস্যু আছে-

১। বাংলাদেশ হাতছাড়া হওয়া ভারতের জন্যে অনেক বড় ক্ষতি। তাই তারা মরণ কামড় দিয়ে চাচ্ছে আগের Status Quo বজায় রাখতে।

২। ভারত পরিবর্তিত অবস্থা বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। তারা এখনো ভাবছে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব।  এক্ষেত্রে তারা হয়ত আমেরিকার সাথে ন্যাগোসিয়েশন চালিয়ে যাচ্ছে।


ভারতের ফরেন মিনিস্টার জয়শঙ্কর সাহেব খুবই ইন্টিলিজেন্ট একজন ব্যক্তি, ভারতের উদ্ভট কাজ দেখে মনে হচ্ছে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে প্ল্যান করে আগাতে পারছেন না, বরং BJP এর কট্টর কিছু নেতা পলিসি বানাচ্ছেন।


বাংলাদেশ মূলত ভারত থেকে 'অতিরিক্ত' কিছু চায় না,

 তারা 'প্রাপ্য' অংশটুকু চায় যা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা স্বীকৃত, 

যেমন পানি বন্টন, বর্ডার হত্যা বন্ধ ইত্যাদি।


ভারত যদি এই ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে না পারে,

আল্টিমেটলি বাংলাদেশকে এমন ভাবে আগাতে হবে যেন ন্যায্যতা পায়, আর এটা ভারতকেই সংকটে ফেলে দিতে পারে। 

চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এর সাথে ভাল সম্পর্ক মোটামুটি ভারতের সীমান্ত সংকট বাড়ানোর জন্যে যথেষ্ট,  সেটা সার্ক দিয়ে হোক বা Bilateral বা multilateral সম্পর্ক দিয়েই হোক। 


আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্ধু পাওয়া বাংলাদেশের খুব একটা সমস্যা হবে না, বিশেষ করে যখন Indo Pacific Zone টা এখন Future Battle Ground হচ্ছে। 


তাই হয় আমরা ভারতের সাথে একটা ন্যায্য চমৎকার একটা win win সম্পর্ক পাচ্ছি, 

অথবা আমরা একটা সম্পূর্ণ নতুন একটা South Asia পাচ্ছি যেখানে বাংলাদেশ একটা উঠতি শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post